Wednesday, August 11, 2021

করোনা টিকার অ্যাপ: সুরক্ষা'য় যেভাবে ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন

full page বাংলাদেশে রবিবার ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুরুতেই সম্মুখ সারির কর্মী এবং ৪০ বছরের বেশি নাগরিকদের টিকা দেয়া হবে। এই বয়স সীমা আগে ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হলেও সেটি আবার কমিয়ে আনা হয়েছে। ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা যে কোন সরকারি হাসপাতালে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। তবে টিকা নিতে হলে নাম নিবন্ধন করতে হবে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এর আগে এ বিষয়ক একটি অ্যাপ চালু হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সেটি আর কাজ করছে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(এমআইএস) ডা. মিজানুর রহমান বলেন, অ্যাপটি এখনো তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি বলে কাজ শুরু হয়নি। তবে এটি শিগগিরই চলে আসবে। অ্যাপ না থাকলেও নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটে রেজিস্ট্রেশন চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। স্পট রেজিস্ট্রেশন প্রাথমিক পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা পেতে নিবন্ধন করা নিয়ে ঝামেলার মুখে পড়ার কথা অনেকে জানানোর পর নিবন্ধনের কাজ সহজ করতে নেয়া পদক্ষেপের অংশ হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্পট রেজিস্ট্রেশন বা টিকা কেন্দ্রে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থার কথা জানিয়েছিল। বিবিসি বাংলাও এ বিষয়ে এই প্রতিবেদনে সে খবর দিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ১১ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান সরকার 'স্পট রেজিস্ট্রেশন' অর্থাৎ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে রেজিস্ট্রেশন করে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন এখন থেকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করা মানুষেরাই কেবল নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনের জন্য সুরক্ষা.গভ.বিডি https://www.surokkha.gov.bd/ নামের ওয়েবসাইটে টিকা নিতে আগ্রহীদের নাম নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং নাম, ঠিকানা, বয়স, পেশা, শারীরিক পরিস্থিতি, ফোন নাম্বার ইত্যাদি তথ্য। সেখানে প্রথমে নিজের পেশার ধরণ, পেশা বাছাই করার পরে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে। বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের প্রোগ্রামাররা এই ডাটাবেজটি তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ''এটি একটি ওয়েব অ্যাপলিকেশন। দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারে এটি হোস্ট করা হয়েছে। ফলে যত মানুষ এটায় নিবন্ধন করতে চাইবেন, সেই অনুযায়ী এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে।'' তিনি জানিয়েছেন, এর মোবাইল ভার্সনটি প্রস্তুত করে রাখা হবে। যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইবে, তখনি তাদের দেয়া হবে।'' বাংলা ও ইংরেজি, উভয় ভাষায় এই ওয়েবসাইটে তথ্য পূরণ করা যাবে। ওয়েব অ্যাপলিকেশনে নিবন্ধন করতে হলে তাদের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। কোভিড ১৯ টিকাদান কর্মসূচি ফর্ম নিবন্ধন করার সময় তার নাম, বয়স, পেশা, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা (সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার ওয়ার্ড), যে কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহী - সেই কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিতে হবে। একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দেশের জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে এই ওয়েবসাইট যুক্ত থাকবে। ফলে যখন কেউ তার এনআইডির নম্বর প্রবেশ করবেন, সঙ্গে সঙ্গে তার নাম, পরিচয়, বয়স ইত্যাদি ডাটাবেজে চলে আসবে। তবে এজন্য কোন স্ক্যান করা কপি বা ছবি দিতে হবে না। নিবন্ধনের জন্য কোন খরচ বা ফি নেই। একটি এনআইডি নম্বর থেকে একবারই নিবন্ধন করা যাবে। যেকোনো ব্যক্তি তার কম্পিউটার ব্যবহার করে এই নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর একটি ভ্যাকসিন কার্ড আসবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় এই কার্ডটি দরকার হবে। মোবাইল নম্বরে যাবে এসএমএস নাম নিবন্ধন করার সময় একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। নম্বরটি যাচাই করার জন্য একটি ওভার দ্য ফোন বা ওটিপি নম্বর আসবে। সেটা ওয়েবসাইটে দেয়ার পর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই মোবাইল নম্বরেই এসএমএস পাঠিয়ে টিকা দেয়ার সময় ও স্থান জানিয়ে দেয়া হবে। সেই নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে টিকা নিতে হবে। সে সময় নিবন্ধনের কার্ডটি দরকার হবে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচ জন সদস্যের জন্য নিবন্ধন করা যাবে। কীভাবে অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হবে? নিবন্ধন করার সময় পেশা নির্বাচনের একটি ঘর আসবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পেশা নির্বাচন করতে হবে। তবে অ্যাপলিকেশন নির্মাণের সঙ্গে সংযুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি সম্মুখ সারিতে কর্মরত ব্যক্তিদের তালিকা আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তালিকায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও থাকছে। সেটাও ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ফলে যখন কেউ নাম নিবন্ধন করবেন, সেই তালিকার সঙ্গে মিলে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকা নেয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় চলে আসবেন। পাশাপাশি ওই ব্যক্তির ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা হৃদরোগের মতো অন্য কোন শারীরিক জটিলতা আছে কিনা, সেটা জানানোর একটি অপশন আসবে, যেখানে হ্যাঁ অথবা না চিহ্নিত করে দিতে হবে। টিকা নেয়ার সার্টিফিকেট প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, এই সুরক্ষা অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে প্রত্যেকে টিকা সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে টিকার দু'টি ডোজ নেয়ার পর তিনি টিকা নেয়ার একটি সনদ এই ওয়েবসাইট থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, অনলাইনে এভাবে নিবন্ধন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে কতোজন মানুষ টিকা পেয়েছেন, কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ পাচ্ছেন, সকল তথ্য পাওয়া যাবে। প্রথমে যারা টিকা পাবেন টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৭ ক্যাটেগরির নাগরিকদের নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে তাদের টিকা নেয়ার পরে অন্যরা টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন। এই ১৭ ক্যাটেগরির মধ্যে রয়েছে: সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী, বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখসারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, সকল ধর্মের ধর্মীয় প্রতিনিধি, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক ।